কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার মধ্যে সারাদেশে টানা পাঁচদিন ইন্টারনেট শাটডাউন ছিল। চালুর পরও ইন্টারনেট সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে। কখনও মিলছে, আবার কখনও ধীরগতি। এতে চরম বিপাকে পড়েছেন দেশের ৭ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার। যে ক্ষতির মুখে তারা পড়েছেন, তা কাটিয়ে উঠতে কমপক্ষে ছয়মাস সময় লাগবে বলেও জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ফ্রিল্যান্সারদের ভয়াবহ এ ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে প্রণোদনা বাড়ানোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। গতকাল মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে ‘চলমান সময়ে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক জরুরি সভা’ শেষে ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের (বিসিসি) সম্মেলনকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফ্রিল্যান্সাররা যে প্রোডাক্ট এক্সপোর্ট করেন তা থেকে যে আয় আসে, তার ওপর নগদ প্রণোদনা দেওয়া হয়। সম্প্রতি তাদের যে ক্ষতি হয়েছে, তা কিছুটা হলেও পুষিয়ে দিতে এই প্রণোদনাটা একটু বাড়ানো যায় কি না, তা নিয়ে আমরা কাজ করছি। আমি নিজে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ নিয়ে কথা বলবো। তাদের নগদ প্রণোদনা যেন ৩ বা ৪ শতাংশ করা হয়, সে বিষয়ে জোর সুপারিশ করা হবে। ফ্রিল্যান্সারদের কাছে ক্ষমা চেয়ে জুনাইদ আহমেদ পলক বলেন, ইন্টারনেট শাটডাউন থাকায় এবং দেশের এ পরিস্থিতির কারণে আমাদের ৭ লাখেরও বেশি ফ্রিল্যান্সার ভাই-বোনেরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন। তাদের কাছে আমি ব্যক্তিগতভাবে ক্ষমাপ্রার্থী। যদিও তাদের ক্ষতি পুরোপুরি পুষিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়। তারপরও সরকার তাদের ব্যাপারে আন্তরিক। সবসময় তাদের পাশে থাকবে সরকার। এদিকে জানা গেছে, ফ্রিল্যান্সারদের ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। ফলে ফ্রিল্যান্সাররা এখন কোনো প্রণোদনার সুবিধা পান নি। বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সার ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির (বিএফডিস) সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, সরকার আমাদের ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনা দেওয়ার কথা বললেও তা এখনো কার্যকর হয়নি। তার মধ্যে আবার বড় ক্ষতির মুখে পড়েছি আমরা। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দাবি- নগদ প্রণোদনা ১০ শতাংশ করে তা দ্রুত কার্যকর করা। আইটি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ শতাংশ নগদ প্রণোদনা পান। তাদের মতোই ফ্রিল্যান্সারদেরও ১০ শতাংশ করা খুবই জরুরি। এদিকে সহিংসতামূলক কনটেন্ট ছড়ানোয় বাংলাদেশে মেটার তিনটি প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টিকটক বন্ধ রয়েছে। তবে কবে এসব প্ল্যাটফর্ম খুলে দেওয়া হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেননি পলক। গতকাল মঙ্গলবার এ বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেন জুনাইদ আহমেদ পলককে। জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যদি তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক হয়, তাহলে তো আমরা শিগগির খুলে দেবো। বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম একটি উদার গণতান্ত্রিক দেশ। যেখানে কোনো বাধা নেই। আমরা শুধু তাদের জিজ্ঞাসা করেছি যে, বাংলাদেশের আইন, সংবিধান এবং তাদের নিজস্ব যে পলিসি ও কমিউনিটি গাইডলাইন আছে, সেটা তারা কীভাবে মেইনটেইন করছে বা আদৌও করছে কি না। সেটা আমরা জানতে চাই। এদিকে এই তিনটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে সরকারের পক্ষ থেকে তলব করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। পাশাপাশি ইউটিউব চালু থাকলেও তাদেরও তলব করা হয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী পলক বলেন, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তাদের জবাব দেওয়ার সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বুধবার ফেসবুক, টিকটক ও ইউটিউবের প্রতিনিধিদের সশরীরে বিটিআরসিতে হাজির হতে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তবে গতকাল মঙ্গলবার দুপুর ২টা পর্যন্ত শুধু টিকটকের পক্ষ থেকে ই-মেইলে সাড়া মিলেছে। ইউটিউব ও মেটা (ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও হোয়াটসঅ্যাপ) বিটিআরসিকে এখনো পর্যন্ত কোনো জবাব দেয়নি। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতার কারণে টানা ১০ দিন সারাদেশে বন্ধ ছিল মোবাইল ইন্টারনেট সেবা। অবশেষে রোববার বিকেল পৌনে ৩টার দিক থেকে ধীরে ধীরে এ সেবা চালু করা হয়। ৩টার পর থেকে অধিকাংশ গ্রাহক মোবাইলে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারেন। তবে মোবাইল ইন্টারনেট চালু হলেও ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক, এক্স (সাবেক টুইটার) বন্ধ রয়েছে। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে গত ১৮ জুলাই সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। ওইদিন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়। এর পাঁচদিন পর ২৩ জুলাই রাত থেকে পরীক্ষামূলকভাবে সীমিত পরিসরে চালু করা হয় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা। তবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু হলেও চালু হয়নি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং টিকটক। এদিকে কোটা সংস্কার ঘিরে আন্দোলনের দশ দিনে বিভিন্ন ওয়েব সাইটে ৫০ হাজারেরও বেশি সাইবার হামলা হয়েছে বলে জানিয়ে পলক বলেন, সরকারে বিভিন্ন পরিকাঠামোকে আক্রমণ করে তারা অর্থ বা তথ্য হ্যাক করতে চায়। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা আরও গুরুত্ব দিচ্ছি। আমাদের গোয়েন্দা তথ্য এবং আন্তর্জাতিক সংস্থার তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে আমরা বলছি যে, আমাদের তথ্য পরিকাঠামোয় বড় ধরনের সাইবার হামলা হতে পারে। সেটা গুরুত্ব দিয়ে আমরা সভা করছি। গত ১০ বা ১৫ দিনে কতগুলো সাইবার আক্রমণ হয়েছে জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের জানমতে ৫০ হাজারেরও বেশি বার হামলা হয়েছে গত দশ দিনে। সেখানে আমাদের আটটি ওয়েবসাইটকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ওয়েবসাইট হ্যাক হয়নি। বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক করা নিয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, আমরা পর্যালোচনা করে দেখেছি বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইট হ্যাক হয়নি। নিয়মিত লেনদেন এবং সব কাজ স্বাভাবিকভাবেই হয়েছে। সেটা আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি কেন এটা হয়েছে। সেটা আমরা সমাধান করতে পেরেছি। এ বিষয়ে নিয়ে আমরা গোপনে তদন্ত করেছি। আমাদের জানামতে আটটি ওয়েব সাইটে আক্রমণ করার প্রচেষ্টা করা হয়েছে। তবে আমাদের কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো অর্থ বা উপাত্ত চুরি হয়নি। প্রতিমন্ত্রী বলেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও কিন্তু সাইবার হামলার শিকার হয়েছে। আমাদের ৭০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে আক্রমণ হয়েছে। যারা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাইটে আক্রমণ করছে তারা দেশের ভালো চায় না। আমাদের ব্যাংক বা সরকারি প্রতিষ্ঠানে যারা হামলা করছে তারা দেশের ভালো চায় না। আমাদের আইএসপিতেও হামলা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফিজিক্যাল হামলার পাশাপাশি সাইবার হামলার ঝুঁকি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান পলক।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

ফ্রিল্যান্সারদের ক্ষতি পোষাতে প্রণোদনা বাড়ানো হবে : আইসিটি প্রতিমন্ত্রী
- আপলোড সময় : ৩১-০৭-২০২৪ ১২:১৭:৪৫ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ৩১-০৭-২০২৪ ১২:১৭:৪৫ পূর্বাহ্ন


কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ